আন্দোলন আরও বিস্তৃত: এবার ‘স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা’ রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন!
দেশের শিক্ষা খাতের সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয়করণ ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে টানা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আন্দোলনে নামার নতুন হুঁশিয়ারি দিল আরও একটি শিক্ষক গোষ্ঠী।
একদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা টানা দশম দিনের মতো রাজপথে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন, অন্যদিকে এবার তাদের সাথে যোগ না দিলেও নিজস্ব দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন “স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা”।
মূল প্রেক্ষাপট: জ্বলছে এমপিও শিক্ষকদের প্রতিবাদের আগুন
এই নতুন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বোঝার জন্য আগে চলমান আন্দোলনের দিকে তাকাতে হবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা (প্রধানত মাধ্যমিক ও কলেজ) তাদের ৩ দফা দাবিতে (পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণ, ১০০% বাড়ি ভাড়া ও উৎসব ভাতা) টানা দশম দিনের মতো ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
তাদের এই লাগাতার আন্দোলনের ফলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শিক্ষক নেতারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে তারা ‘যমুনা অভিমুখে যাত্রা’-এর মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।
নতুন চাপ: কেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরাও আন্দোলনে?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই এবার নিজেদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে আন্দোলনের হুমকি দিল “স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা”। এই শিক্ষকরা হলেন মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তরের মূল চালিকাশক্তি।
দীর্ঘদিন ধরে তারা তাদের চাকরি জাতীয়করণ, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মতো সমান সুযোগ-সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় এবং চলমান আন্দোলনে অন্য শিক্ষকদের রাজপথে দেখে তারাও অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন।
বিশ্লেষণ: সরকারের জন্য ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা
এই নতুন হুঁশিয়ারি সরকারের জন্য সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। পরিস্থিতি এখন এমন:
- মাধ্যমিক ও কলেজ: এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ৩ দফা দাবিতে রাজপথে আমরণ অনশন করছেন।
- প্রাথমিক (মাদরাসা): স্বাধীন ইবতেদায়ি শিক্ষকরাও এখন তাদের দাবি আদায়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এর ফলে শিক্ষা খাতের বৈষম্য নিরসনের চাপ এখন চতুর্মুখী। একদিকে যখন সরকার ১০ম পে-কমিশন নিয়ে কাজ করছে, ঠিক তখনই শিক্ষা খাতের এই দুই বৃহৎ অংশের একযোগে আন্দোলন সরকারকে বড় ধরনের নীতিগত চাপে ফেলে দিয়েছে।
শেষ কথা
শিক্ষক সমাজের এই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রমাণ করে যে, শিক্ষা খাতের বৈষম্য এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশাপাশি ইবতেদায়ি শিক্ষকরাও যদি একযোগে আন্দোলনে নামেন, তবে তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নজিরবিহীন অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই বহুমুখী চাপ কীভাবে সামাল দেয় এবং শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।