শিক্ষকরা নবউদ্যমে ক্লাসে ফিরবেন”: প্রধান উপদেষ্টার আশা! ৭.৫% বৃদ্ধিতে কি ভাঙবে অনশন?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমরণ অনশনে যখন সারাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির, তখন এই সংকট নিয়ে মুখ খুললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সরকারের নেওয়া নতুন পদক্ষেপের প্রশংসা করে আশা প্রকাশ করেছেন যে, আন্দোলনরত শিক্ষকরা এবার “নবউদ্যমে শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন” এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ায় মন দেবেন।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা এই আশাবাদ এমন এক সময়ে এলো, যখন সরকার শিক্ষকদের জন্য দুই ধাপে মোট ১৫% বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারের ‘নতুন উদ্যোগ’ আসলে কী?
প্রধান উপদেষ্টা যে ‘নতুন উদ্যোগ’-এর কথা বলছেন, তা হলো শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী:
- প্রথম ধাপ: চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে (ন্যূনতম ২,০০০ টাকা)।
- দ্বিতীয় ধাপ: ২০২৬ সালের জুলাই থেকে এটি আরও ৭.৫ শতাংশ বেড়ে মোট ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি মনে করছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের পর শিক্ষকদের আর রাজপথে থাকার প্রয়োজন নেই।
প্রধান উপদেষ্টার ‘আশা’ বনাম রাজপথের ‘বাস্তবতা’
প্রধান উপদেষ্টা যখন শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার আশা প্রকাশ করছেন, তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই “১৫ শতাংশ বৃদ্ধি”র প্রস্তাবটি আন্দোলনরত শিক্ষকরা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
শিক্ষকদের যে ৩টি দাবিতে আমরণ অনশন চলছে, সেগুলো হলো:
১. পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণ। ২. ১০০% বাড়ি ভাড়া (বর্তমান ১,০০০ টাকার পরিবর্তে)। ৩. ১০০% উৎসব ভাতা (বর্তমান ২৫% এর পরিবর্তে)।
শিক্ষক নেতারা সরকারের এই দুই ধাপের ১৫% বৃদ্ধিকে তাদের মূল দাবির তুলনায় ‘অত্যন্ত নগণ্য’ এবং ‘প্রহসনমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, যখন তারা ১০০% বাড়ি ভাতার জন্য জীবন বাজি রেখে আমরণ অনশন করছেন, তখন এই ১৫% এর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
বিশ্লেষণ: ফারাক কমছে না
এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, সরকার এবং আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্যেকার আস্থার সংকট বা দাবির ফারাক এতটুকুও কমেনি।
- সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: সরকার মনে করছে, নির্দিষ্ট ১,০০০ টাকার প্রথা ভেঙে ‘শতাংশ’ হারে ভাতা বৃদ্ধি (তা-ও ১৫% পর্যন্ত) একটি বিশাল অর্জন ও “নতুন উদ্যোগ”।
- শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি: শিক্ষকরা মনে করছেন, এটি তাদের মূল দাবি থেকে মনোযোগ সরানোর একটি কৌশল। তারা একটি স্থায়ী এবং সম্মানজনক সমাধান (জাতীয়করণ) চান, কোনো খণ্ডিত বা কিস্তিতে বাস্তবায়নযোগ্য ভাতা নয়।
শেষ কথা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই আশাবাদ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন সরকারের অভ্যন্তরীণ সন্তুষ্টির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। কিন্তু এটি রাজপথে অনশনরত শিক্ষকদের ক্ষোভ কমাতে পারেনি। শিক্ষকরা তাদের দাবিতে অটল থাকায়, এই সংকট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে আরও বড় এবং কার্যকরী পদক্ষেপের প্রয়োজন, নিছক ‘আশাবাদ’ নয়।