দেশের ৯.৯% কৈশোর শিক্ষার্থী তামাকাসক্ত! তরুণদের বাঁচাতে ক্লাসরুমে আলোচনার দাবি
একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার তরুণ প্রজন্মের ওপর। কিন্তু সেই তরুণরাই যদি স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও বিধ্বংসী তামাকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে, তবে তা দেশের জন্য এক অশনি সংকেত। সম্প্রতি এক জরিপে বাংলাদেশের কৈশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, তা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন এবং সহজলভ্যতার কারণে তরুণরা জেনেবুঝেও এই মরণ নেশার ফাঁদে পা দিচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষেই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণদের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এক সভায় এই গভীর উদ্বেগ ও সমাধানের আহ্বান জানানো হয়।
পরিসংখ্যান কতটা ভয়াবহ? (একনজরে বৈশ্বিক ও বাংলাদেশ)
তামাকের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এই কথাটি জানা সত্ত্বেও আসক্তির হার কমছে না। পরিসংখ্যানগুলো দেখলেই এর ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে:
- বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিত্র: গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে (জিওয়াইটিএস) ২০২২-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সি (অষ্টম-দশম শ্রেণি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জন কৈশোর বয়সী শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১০ জনই তামাক ব্যবহার করছে।
- বৈশ্বিক মৃত্যু: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, তামাকের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ৮৭ লাখ (৮.৭ মিলিয়ন) মানুষ অকালে প্রাণ হারায়।
- বাংলাদেশে মৃত্যু: শুধু বাংলাদেশেই তামাকজনিত রোগে বছরে মারা যায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ।
- অকাল মৃত্যু: সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশই তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে (ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক) অকালে মৃত্যুবরণ করে।
কেন শ্রেণিকক্ষে আলোচনা জরুরি? (বিশেষজ্ঞদের দাবি)
সভায় বক্তারা বলেন, তরুণদের এই আসক্তি থেকে ফেরাতে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। আর এই সচেতনতা তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তাদের প্রধান দাবি হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে নিয়মিতভাবে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।
এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন:
১. সঠিক সময়ে সচেতনতা: কৈশোর হলো কৌতূহলের বয়স। এই সময়েই যদি শিক্ষার্থীদের সামনে তামাকের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়গুলো বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তসহ তুলে ধরা যায়, তবে তারা শুরুতেই এই নেশা থেকে দূরে থাকবে। ২. পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি: তামাকের ভয়াবহতার বিষয়টি পাঠ্যসূচির অংশ করা গেলে তা শিক্ষার্থীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ৩. আইনের কঠোর প্রয়োগ: সচেতনতার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর বাস্তবায়নও জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং তরুণদের কাছে বিক্রি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেষ কথা
আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং শ্রেণিকক্ষে সচেতনতা এই দুটি বিষয় একযোগে কাজ করলেই কেবল তামাকের এই ভয়াল থাবা থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব। অন্যথায়, স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তরুণদের এই নেশার পথে ধাবিত হওয়া রোধ করা যাবে না, যা আমাদের একটি অসুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে ঠেলে দেবে।