জুলাই সনদ’ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবি: ৬৯ শতাংশ মানুষের জোরালো সমর্থন (জরিপ)
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এই আন্দোলন থেকে উঠে আসা ‘জুলাই সনদ’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঐতিহাসিক সনদকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে সম্প্রতি একটি জনমত জরিপে, যেখানে এক বড় অংশই এটিকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ‘একাত্তর টিভি’-এর একটি মতামত জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কী ছিল সেই জরিপে? (ফলাফল একনজরে)
‘একাত্তর টিভি’ তাদের নিয়মিত আয়োজন ‘মতামত জরিপ’-এ দর্শকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল: “‘জুলাই সনদ’ কি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?”
এই প্রশ্নের জবাবে দর্শকদের মধ্যে থেকে যে মতামত পাওয়া গেছে, তা নিম্নরূপ:
- হ্যাঁ (পক্ষে): ৬৯ শতাংশ
- না (বিপক্ষে): ৩১ শতাংশ
এই ফলাফল स्पष्टভাবে দেখাচ্ছে যে, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করে, এই সনদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এটি সম্পর্কে জানা উচিত।
‘জুলাই সনদ’ কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
‘জুলাই সনদ’ হলো গত জুলাই মাসে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ঐতিহাসিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নীতি, লক্ষ্য ও দাবিনামা। এটি শুধু কোটা সংস্কারের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটিকে একটি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রূপরেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই সনদে রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরের বৈষম্য নিরসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছিল। একারণেই অনেকে এই সনদকে নিছক একটি দাবিনামা না ভেবে, একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে দেখছেন।
কেন ৬৯% মানুষ পাঠ্যবইয়ে এটি চায়? (বিশ্লেষণ)
জরিপে ৬৯ শতাংশ মানুষের এই সমর্থন প্রমাণ করে যে, তারা এই আন্দোলন এবং এর সনদকে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে চান। এর পেছনে প্রধান কারণগুলো হতে পারে:
১. ঐতিহাসিক স্বীকৃতি: এই আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যে ভূমিকা রেখেছে, তার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও ঐতিহাসিক স্বীকৃতি দেওয়া। ২. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, এর মূলনীতি এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানতে পারে। ৩. অধিকার সচেতনতা: সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার, দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার অসংগতিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।
৩১% কেন ‘না’ বললেন?
অন্যদিকে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩১ শতাংশ মানুষ এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের এই অবস্থানের পেছনেও বিভিন্ন যুক্তি থাকতে পারে। কেউ হয়তো মনে করতে পারেন, এটি একটি অত্যন্ত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনা এবং একে এখনই পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সময় আসেনি। আবার কেউ কেউ এর কিছু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর সাথে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন।
শেষ কথা
যদিও এই জরিপটি একটি নির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকদের মতামত, তবুও এটি ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে সাধারণ মানুষের সার্বিক ভাবনার একটি বড় প্রতিফলন। ঐতিহাসিক এই সনদটি শেষ পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের পাতায় স্থান পাবে কিনা, তা এখন নির্ভর করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং সরকারের চূড়ান্ত নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর।