৫% বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, রাজপথে অটল শিক্ষকরা
দেশের এমপিওভুক্ত (MPO) শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন এক নতুন মোড় নিয়েছে। জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের শান্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারী নেতারা।
শিক্ষকরা এই প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘প্রহসনমূলক’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের মূল দাবি পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কেন এই ৫% প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলো?
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, তাদের মূল দাবি পাশ কাটিয়ে এই সামান্য ভাতা বৃদ্ধি তাদের সাথে এক ধরনের প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের উপর মাত্র ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান, যা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে একেবারেই নগণ্য।
নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের সংগ্রাম ৫ বা ১০ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং এই বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুক্তি এবং সরকারি চাকরিজীবীদের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য।
শিক্ষকদের মূল দাবিগুলো কী কী?
যদিও ৫% বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবটি আলোচনায় এসেছে, শিক্ষকদের মূল ফোকাস রয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর উপর। প্রধান দাবিগুলো হলো:
- পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণ: দেশের সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একযোগে জাতীয়করণ করে সরকারি শিক্ষকদের সমমর্যাদা প্রদান।
- পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা: সরকারি শিক্ষকদের মতো ১০০% উৎসব ভাতা (ঈদ বা পূজা বোনাস) নিশ্চিত করা।
- ১০০% বাড়ি ভাড়া: বর্তমান ১,০০০ টাকার পরিবর্তে মূল বেতনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া প্রদান।
- পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা: ৫০০ টাকার পরিবর্তে সরকারি মানদণ্ড অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতা প্রদান।
আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। তীব্র রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষকরা এখনও ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন পালন করে যাচ্ছেন।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সুস্পষ্টভাবে জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। দাবি আদায়ে তারা ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি, যেমন—সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে ধর্মঘট বা ক্লাস বর্জনের মতো কর্মসূচির দিকে যেতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
শেষ কথা
এই ৫ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে শিক্ষকরা সরকারকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন। এটি স্পষ্ট যে, দেশের “মানুষ গড়ার কারিগর” হিসেবে পরিচিত এই বিশাল শিক্ষক সমাজ আর সামান্য অনুদান বা ভাতা নয়, বরং তাদের ন্যায্য অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা আদায়ে বদ্ধপরিকর। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই অচলাবস্থা নিরসনে এবং শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।