শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫% বাড়ছে! অর্থ মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়ার মধ্যে অন্যতম ছিল বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি। অবশেষে সেই দাবিতে সাড়া দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই অনুমোদনের ফলে সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এই অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। চলুন, এই সিদ্ধান্তের বিস্তারিত এবং এর পেছনের প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া যাক।
সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট: কী ছিল এই প্রস্তাবে?
বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসিক বাড়ি ভাড়া বাবদ নির্ধারিত ১,০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা পান। যা বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় খুবই নগণ্য বলে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন।
শিক্ষকদের এই অসন্তোষ দূর করতে এবং চলমান জাতীয়করণের আন্দোলনকে কিছুটা প্রশমিত করার লক্ষ্যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বৃদ্ধির একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে আজ সেটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন (সবুজ সংকেত) দিয়েছে।
এই অনুমোদনের পর কী হবে? (পরবর্তী প্রক্রিয়া)
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ায় এই সিদ্ধান্তটি এখন বাস্তবায়নের পথে। পরবর্তী ধাপগুলো হলো:
১. প্রজ্ঞাপন জারি: অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই অনুমোদনের চিঠিটি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
২. আদেশ কার্যকর: শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই অনুমোদনের ভিত্তিতে একটি সরকারি আদেশ বা প্রজ্ঞাপন (GO) জারি করবে।
৩. বাস্তবায়ন: সেই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্ধিত হারে বাড়ি ভাড়া পাওয়া শুরু করবেন।
শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া: এই বৃদ্ধিতে কি সন্তুষ্ট তারা?
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এই ৫% বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা এটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘প্রহসনমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তারা এমন এক সময়ে এই ৫% বৃদ্ধির খবর পেলেন, যখন তারা পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের মূল দাবিগুলো হলো:
- সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১০০% বাড়ি ভাড়া।
- পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা।
- পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা।
- এবং সবশেষে, শিক্ষা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণ।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, এই সামান্য ভাতা বৃদ্ধি তাদের মূল দাবি থেকে মনোযোগ সরানোর একটি কৌশল মাত্র। তাই, এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তারা জাতীয়করণের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অটল রয়েছেন।
শেষ কথা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই অনুমোদন সরকারের একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ। তবে এটি শিক্ষকদের চলমান অসন্তোষ কতটা কমাতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শিক্ষকরা এই ‘সামান্য’ বৃদ্ধি প্রত্যাখ্যান করে তাদের মূল দাবি ‘জাতীয়করণ’-এর পক্ষে রাজপথে থাকায়, এই অচলাবস্থা নিরসনে আরও বড় ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।