১০ম বেতন কমিশন: বৈষম্য নিরসনের দাবিতে পে-কমিশনের সাথে বৈঠকে ৮টি সংগঠন
দেশের সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুল কাঙ্ক্ষিত ১০ম বেতন কমিশন নিয়ে আলোচনার মাঠ সরগরম। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নতুন পে-স্কেলের দাবি দীর্ঘদিনের।
এই পরিস্থিতিতে, বেতন কাঠামো পর্যালোচনা ও বৈষম্য নিরসনের জন্য গঠিত পে-কমিশনের সাথে আজ (সোমবার) বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দেশের ৮টি শীর্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠন। এই বৈঠককে ঘিরে চাকরিজীবীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, কারণ এখানেই তাদের মূল দাবিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হবে।
আজকের বৈঠক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
এই বৈঠকটি নিছক একটি রুটিন সাক্ষাৎ নয়। এটি ১০ম বেতন কমিশনের সুপারিশমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান ধাপ। দেশের বিভিন্ন খাতের লক্ষ লক্ষ চাকরিজীবী এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে তাদের বঞ্চনা ও দাবি-দাওয়ার কথা পে-কমিশনের কাছে তুলে ধরবেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৈঠকের ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই পে-কমিশন তাদের প্রাথমিক সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার পথে এগোবে। তাই আজকের আলোচনাকে নতুন পে-স্কেলের ‘ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংগঠনগুলোর প্রধান দাবিগুলো কী হতে পারে?
যদিও ৮টি সংগঠন তাদের নিজস্ব খাতভিত্তিক দাবি তুলে ধরবে, তবে কিছু ‘সাধারণ দাবি’ (Common Demands) আজকের বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দাবিগুলো হলো:
- দ্রুততম সময়ে ১০ম পে-স্কেল ঘোষণা: বর্তমান মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অবিলম্বে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা।
- বেতন বৈষম্য নিরসন: ক্যাডার ও নন-ক্যাডার, এবং উচ্চ ও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান চরম বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেওয়া।
- বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি: সরকারি শিক্ষকদের আন্দোলনের (যারা ১০০% বাড়ি ভাড়া দাবি করছেন) মতো অন্যান্য সকল চাকরিজীবীর জন্যও যুগোপযোগী বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা নিশ্চিত করা।
- বেতন গ্রেডের যৌক্তিকীকরণ: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে এনে একটি যৌক্তিক ও সম্মানজনক বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা।
- বিশেষ ভাতা প্রদান: শিক্ষা সহায়ক ভাতা, টিফিন ভাতা এবং অন্যান্য যে ভাতাগুলো বহু বছর ধরে বাড়েনি, সেগুলো বর্তমান সময়ের আলোকে পুনর্নির্ধারণ করা।
কারা এই ৮টি সংগঠন?
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যে ৮টি সংগঠন অংশ নিচ্ছে, তারা হলো দেশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষস্থানীয় জোট। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা। তারা সম্মিলিতভাবে তাদের নিজ নিজ সদস্যদের দাবিগুলো পে-কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
শেষ কথা
সারাদেশের সরকারি চাকরিজীবীরা এখন এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন। আজকের আলোচনার ফলপ্রসূতার উপর নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা। আশা করা যাচ্ছে, পে-কমিশন এই দাবিগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে এবং একটি যৌক্তিক ও বৈষম্যহীন বেতন কাঠামোর সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করবে।