আন্দোলন দমাতে “চাপ প্রয়োগ”? অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা চাইলেন শিক্ষা অফিসার!
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণ ও বৈষম্য নিরসনের আন্দোলন যখন ‘আমরণ অনশন’-এর মতো কঠোরতম কর্মসূচিতে গড়িয়েছে, ঠিক তখনই মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন আন্দোলন দমাতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে শিক্ষক নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তারা এই পদক্ষেপকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ‘হুমকি’ এবং ‘চাপ প্রয়োগের কৌশল’ হিসেবে দেখছেন।
কী আছে সেই বিতর্কিত চিঠিতে?
জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসারের (অতিঃ দাঃ) কার্যালয় থেকে রবিবার (১৯ অক্টোবর) জেলার সকল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, “শিক্ষক আন্দোলনে অংশগ্রহণ বা অন্য কোনো কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে সব শিক্ষক-কর্মচারী কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করছেন, তাদের তথ্যাদি সংযুক্ত ছক অনুসারে… দপ্তরে নিয়মিত এমএস ওয়ার্ডে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।”
সোজা কথায়, যে সকল শিক্ষক-কর্মচারী তাদের স্কুল বা কলেজে উপস্থিত না থেকে ঢাকায় চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের একটি আনুষ্ঠানিক তালিকা চাওয়া হয়েছে।
তীব্র ক্ষোভ ও হুঁশিয়ারি শিক্ষক নেতাদের
প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এই চিঠি প্রকাশের পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব, অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি এই ঘটনাকে আন্দোলন বানচালের একটি অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন:
- এই চিঠি অনৈতিক এবং আন্দোলনরত শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখানোর একটি কৌশল মাত্র।
- তিনি অবিলম্বে এই ‘হুমকিমূলক’ চিঠি প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
- তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি এই চিঠি প্রত্যাহার করা না হয়, তবে এর দায়ভার সম্পূর্ণভাবে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসারকে নিতে হবে।
কেন এই পদক্ষেপকে ‘হুমকি’ মনে করা হচ্ছে?
শিক্ষক নেতারা মনে করছেন, এই তালিকা সংগ্রহের উদ্দেশ্য মোটেও ভালো নয়। তাদের আশঙ্কা, এই তালিকা ব্যবহার করে পরবর্তীতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। যেমন:
- চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের (Show-Cause) নোটিশ দেওয়া।
- বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া।
- বিভাগীয় মামলা দায়ের করা।
যখন শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি (১০০% বাড়ি ভাড়া, ১০০% উৎসব ভাতা ও জাতীয়করণ) আদায়ের জন্য আমরণ অনশনের মতো সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করছেন, তখন সরকারের ৫% ভাতা বৃদ্ধির ‘প্রহসনমূলক’ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর, মাঠ প্রশাসনের এই ‘চাপ প্রয়োগের কৌশল’ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
শেষ কথা
একদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের আমরণ অনশন, অন্যদিকে আন্দোলনরতদের তালিকা প্রস্তুতের প্রশাসনিক নির্দেশ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন এক অগ্নিগর্ভ অবস্থায়। শিক্ষকরা বলছেন, কোনো ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে এবার তাদের রাজপথ থেকে সরানো যাবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবেই।