শিক্ষকদের ‘বাস্তব ও দৃশ্যমান অগ্রগতি’ হয়েছে: শিক্ষা উপদেষ্টা। রাজপথের চিত্র ভিন্ন!
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণ, শতভাগ বাড়ি ভাড়া ও উৎসব ভাতার দাবিতে চলমান আন্দোলন এবং আমরণ অনশনের মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য এসেছে। শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার দাবি করেছেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে “বাস্তব ও দৃশ্যমান অগ্রগতি” হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। তবে, শিক্ষা উপদেষ্টার এই ‘অগ্রগতি’র দাবির সাথে একমত নন রাজপথে আমরণ অনশনরত শিক্ষকরা।
শিক্ষা উপদেষ্টা ঠিক কী বলেছেন?
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বৃদ্ধির যে প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে, সেটিই এই “বাস্তব ও দৃশ্যমান অগ্রগতির” একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের দাবি পূরণে যেখানে ‘বাস্তব ও দৃশ্যমান অগ্রগতি’ হয়েছে, সেখানে তাদের আর রাজপথে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
তিনি আন্দোলনরত সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার এবং ক্লাসে মনোনিবেশ করার জন্য জোরালো আহ্বান জানান।
উপদেষ্টার আহ্বানে শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া কী?
শিক্ষা উপদেষ্টার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের ৩ দফা দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ পালন করছেন।
উপদেষ্টার এই আহ্বানকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা। তাদের বক্তব্য:
- ‘অগ্রগতি’ নয়, ‘প্রহসন’: সরকার যে ৫% বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবকে ‘অগ্রগতি’ বলছে, সেটিকে শিক্ষকরা আগেই ‘প্রহসনমূলক’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
- মূল দাবি পূরণ হয়নি: শিক্ষকদের মূল দাবি ৩টি—পূর্ণাঙ্গ জাতীয়করণ, ১০০% বাড়ি ভাড়া এবং ১০০% উৎসব ভাতা। এর কোনোটিই পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
- আন্দোলন চলবেই: শিক্ষক নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এমন আশ্বাসে তারা বিভ্রান্ত হবেন না। সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাদের ‘আমরণ অনশন’ সহ সকল কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বিশ্লেষণ: দুই পক্ষের অবস্থানে বড় ফারাক
এই ঘটনাপ্রবাহে এটা স্পষ্ট যে, সরকার এবং আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্যে আস্থার সংকট এবং অবস্থানের বিশাল ফারাক রয়েছে।
- সরকারের অবস্থান: সরকার ৫% ভাতা বৃদ্ধি করে শিক্ষকদের শান্ত করতে চাইছে এবং এটিকে একটি ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে তুলে ধরছে।
- শিক্ষকদের অবস্থান: শিক্ষকরা এই সামান্য বৃদ্ধিকে তাদের মূল দাবি থেকে মনোযোগ সরানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। তারা তাদের মৌলিক দাবিগুলো থেকে একচুলও নড়তে রাজি নন।
শেষ কথা
শিক্ষা উপদেষ্টার ‘ক্লাসে ফিরে যাওয়ার’ আহ্বানের বিপরীতে শিক্ষকরা ‘দাবি আদায়ে অটল’ থাকার ঘোষণা দেওয়ায় এই সংকট আপাতত নিরসন হচ্ছে না। বরং, দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সকলের দৃষ্টি এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।