টাঙ্গাইলে মাদরাসা ‘পকেট কমিটি’ ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ! মানববন্ধন থেকে নিয়োগ স্থগিতের দাবি
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় স্বনামধন্য একটি মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার “ময়থা জামিয়া আরাবিয়া ফাজিল মাদরাসা”-এর বর্তমান কমিটিকে ‘অবৈধ’ ও ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা।
এই ‘পকেট কমিটি’র মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’ চলছে বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে এবং চলমান সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবিতে আজ (মঙ্গলবার) মাদরাসার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর মূল অভিযোগ কী?
আন্দোলনরত এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, মাদরাসার এই পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিং বডি) সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ও গোপনে গঠন করা হয়েছে। তাদের দাবি:
- ‘পকেট কমিটি’ গঠন: স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, অভিভাবক প্রতিনিধি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই ‘পকেট কমিটি’ তৈরি করা হয়েছে।
- বিতর্কিত সদস্য: কমিটিতে এমন সব ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে, যারা এলাকায় বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থী।
- স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি: এই অবৈধ কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্যই হলো প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করা।
“নিয়োগ বাণিজ্যের” গুরুতর অভিযোগ
মানববন্ধনে বক্তারা সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগটি এনেছেন, তা হলো ‘নিয়োগ বাণিজ্য’। তারা বলেন, এই পকেট কমিটি ইতোমধ্যে মাদরাসার বিভিন্ন শূন্য পদে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
বিশেষ করে, মাদরাসার ‘আয়া’ পদের নিয়োগকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ জোরালো হয়েছে। অভিভাবক প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ ফকির তার বক্তব্যে বলেন, “এই অবৈধ কমিটি লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানাই।”
মানববন্ধন থেকে ৩টি সুনির্দিষ্ট দাবি
আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে মাদরাসা গেটের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসী তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন:
১. অবৈধ ‘পকেট কমিটি’ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. বিতর্কিত ‘আয়া’ পদসহ চলমান সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করতে হবে। ৩. সকলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।
কর্মকর্তার বক্তব্য ও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি সদস্য সোহরাব আলী, আব্দুল মালেক মিয়া এবং আবুল কালাম আজাদের মতো স্থানীয় ব্যক্তিরা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি অবিলম্বে এই অবৈধ কমিটি বাতিল করে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা না হয়, তবে তারা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।
এদিকে, এই ‘পকেট কমিটি’ গঠন এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, বাসাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান যে, তিনি এই বিষয়ে কিছুই অবগত নন।
শেষ কথা
একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ‘পকেট কমিটি’ গঠন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা এখন প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছেন, তারা আশা করছেন কর্তৃপক্ষ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে মাদরাসার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে এবং দুর্নীতির এই প্রচেষ্টা রুখে দেবে।