বাংলাদেশ

বিতর্কিত দারুল ইহসান: শুধু ‘বৈধ’ সনদধারী শিক্ষকদের তথ্য চাইল মাউশি (জানুন বিস্তারিত)

“দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়”—এই নামটি বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গনে একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নাম। সার্টিফিকেট বাণিজ্য, অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের সনদ গ্রহণকারী হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী তাদের চাকরি ও এমপিওভুক্তি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন।

এই দীর্ঘদিনের জটিলতার মধ্যেই সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে আশার কথা হলো, এটি সকল সনদধারীর জন্য নয়, বরং একটি বিশেষ অংশের জন্য।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাউশি) থেকে সম্প্রতি শুধু সেইসব শিক্ষকদের তথ্য চাওয়া হয়েছে, যাদের সনদ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১৩টি নির্দিষ্ট মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে।

পটভূমি: কেন এই তথ্য চাওয়া হচ্ছে?

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর এর সনদগুলো নিয়ে এক বিশাল আইনি জটিলতা তৈরি হয়। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী, যারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন, তাদের সনদগুলো অবৈধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

পরবর্তীতে, ভুক্তভোগী শিক্ষকরা আদালতের শরণাপন্ন হন। এর প্রেক্ষিতে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩টি রিট পিটিশনের (মামলার) রায় প্রদান করেন। সেই রায়গুলোর পর্যবেক্ষণে একটি নির্দিষ্ট অংশের শিক্ষকদের সনদকে “বৈধ” হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন সেই আইনি রায়ের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেন বৈধ সনদধারীদের চিহ্নিত করে তাদের এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত জটিলতাগুলো নিরসন করা যায়।

মাউশি’র চিঠিতে ঠিক কী বলা হয়েছে?

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এই তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিটি মাউশি’র সকল আঞ্চলিক পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে এমপিওভুক্ত যে সকল প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপকের সনদ বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত এবং কেবলমাত্র সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১৩টি মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে বৈধ বিবেচিত হয়েছে,”—তাদের তথ্য নির্দিষ্ট ছকে পাঠাতে হবে।

কাদের তথ্য চাওয়া হয়েছে?

এই চিঠিটি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। এটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, দারুল ইহসানের সকল সনদধারীর তথ্য চাওয়া হয়নি। তথ্য চাওয়া হয়েছে শুধু:

১. বেসরকারি কলেজের এমপিওভুক্ত প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের। ২. যাদের সনদ অন্য কোনোভাবে নয়, শুধুমাত্র উল্লিখিত ১৩টি মামলার রায়ের ভিত্তিতে বৈধতা পেয়েছে।

আঞ্চলিক পরিচালকদের এই সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে একটি তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুততম সময়ে মাউশি’র প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।

শেষ কথা

মাউশি’র এই পদক্ষেপকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনে একটি সুনির্দিষ্ট ধাপ সম্পন্ন হলো। এই তালিকার মাধ্যমে সরকার ও শিক্ষা প্রশাসন অবশেষে বৈধ ও অবৈধ সনদধারীদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারবে, যা হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা লাঘবে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *