বাংলাদেশ

জোরপূর্বক পদত্যাগ”! বেতন বন্ধ শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশ

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি অমানবিক হয়রানি বন্ধে অবশেষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা অন্যান্য শিক্ষকদের “জোরপূর্বক পদত্যাগ” করিয়ে তাদের বেতন-ভাতা (এমপিও) বন্ধ করে দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে মন্ত্রণালয়ে।

এই ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে আবেদনে জানানোর পর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একটি কড়া নির্দেশনা জারি করেছে।

মূল সমস্যাটি কী? (হয়রানির প্রেক্ষাপট)

বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি বা প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ে অনেক অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। এরপর, সেই পদত্যাগের অজুহাতে বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের তদন্ত শুরু করার নামে তাদের মাসিক বেতন-ভাতা (যা এখন ইএফটি-এর মাধ্যমে আসে) বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তদন্ত বছরের পর বছর চললেও এই শিক্ষকরা বেতন পান না, ফলে তারা চরম আর্থিক ও সামাজিক সংকটে পড়েন। এই ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অনেকেই তাদের বেতন-ভাতা পুনরায় চালু করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা

সম্প্রতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এই অমানবিক হয়রানি বন্ধে একটি সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে:

১. তদন্ত চলাকালীন বেতন বন্ধ নয়: যে সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে, আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী সেই তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতা (ইএফটি) বন্ধ রাখা যাবে না, বরং তা চালু করতে হবে। ২. জোরপূর্বক পদত্যাগ: যে সকল অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা অন্যান্য শিক্ষককে “জোরপূর্বক পদত্যাগ” করানো হয়েছে, তাদের নাম পুনরায় ইএফটিতে অন্তর্ভুক্ত করে বেতন-ভাতা চালু করতে হবে। ৩. বাধা দিলেই ব্যবস্থা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই বেতন-ভাতা চালুর প্রক্রিয়ায় যদি কোনো কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (যেমন: প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি) অসহযোগিতা করেন বা বাধা প্রদান করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নির্দেশনাটি কাদের জন্য?

এই কঠোর নির্দেশনাটি বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকসহ সকল মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন:

  • সকল অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক
  • সকল জেলা শিক্ষা অফিসার (DEO)
  • সকল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার
  • সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান

শেষ কথা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপকে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা স্বাগত জানিয়েছেন। এটি প্রতিষ্ঠানে অগণতান্ত্রিক চর্চা, ম্যানেজিং কমিটির স্বৈরাচার এবং শিক্ষকদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা বন্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আদেশের ফলে তদন্তের নামে বেতন বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানবেতর জীবনে ঠেলে দেওয়ার অমানবিক প্রথাটি বন্ধ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *