জাতীয়করণের এক দফা: এবার ‘ছাতা মিছিল’ ও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা ইবতেদায়ি শিক্ষকদের
দেশের শিক্ষা খাত যেন এক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয়করণ ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে এবার তাদের মতোই দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসানে মাঠে নামার ঘোষণা দিলেন “স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা”।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে “জাতীয়করণের এক দফা” দাবিতেই তারা এই নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
কেন এই আন্দোলন? (মূল দাবি)
স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার একটি বড় অংশ পরিচালনা করলেও, তারা যুগের পর যুগ ধরে অবহেলিত বলে অভিযোগ করে আসছেন। তাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট:
- এক দফা দাবি: দেশের সকল রেজিস্টার্ড ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদরাসাকে জাতীয়করণ করতে হবে।
- বৈষম্য নিরসন: জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমান বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সরকারই তা আমলে নেয়নি। তাই রাজপথে নামা ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি কী?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং নিজেদের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপ দিতে, ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক নেতারা দুটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন:
১. ছাতা মিছিল (২৭ অক্টোবর): আগামী ২৭ অক্টোবর (সোমবার), শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি অভিনব “ছাতা মিছিল” কর্মসূচি পালন করবেন।
২. অবস্থান ধর্মঘট (২৮ অক্টোবর): পরদিন, ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার), একই স্থানে (জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে) সকাল থেকে দিনব্যাপী “অবস্থান কর্মসূচি” (Sit-in Program) পালন করা হবে।
বিশ্লেষণ: সরকারের ওপর বাড়ছে বহুমুখী চাপ
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমরণ অনশনে শিক্ষা ব্যবস্থা যখন টালমাটাল, ঠিক সেই মুহূর্তে ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের এই নতুন কর্মসূচি সরকারের ওপর চাপকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিল।
এটি স্পষ্ট যে, শিক্ষা খাতের বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা বৈষম্য ও বঞ্চনার ক্ষোভ এখন একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ১৫% বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব যেমন আন্দোলনরতরা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তেমনি ইবতেদায়ি শিক্ষকরাও কোনো খণ্ডিত সমাধান নয়, বরং তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান—অর্থাৎ জাতীয়করণ—চান।
শেষ কথা
শিক্ষা খাতের এই দুটি বৃহৎ অংশের একযোগে আন্দোলন প্রমাণ করে, বৈষম্য নিরসনের দাবিটি এখন পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার এখন কীভাবে এই বহুমুখী চাপ সামাল দেয় এবং শিক্ষকদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে কী ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেদিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।