এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয়? ৪ দফা দাবিতে রাজপথে নামছে শিক্ষার্থীরা!
মেটা ডেসক্রিপশন: ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে দেশজুড়ে অসন্তোষ। অকৃতকার্য ও আশানুরূপ ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীরা সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা ও খাতা পুনর্মূল্যায়নসহ ৪ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। জানুন তাদের দাবিগুলো কী এবং কেন এই আন্দোলন।
ফলাফল প্রকাশের পর কেন এই অসন্তোষ?
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব জায়গায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এবারের ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একে ‘ফলাফল বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এবং প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ফলস্বরূপ, তারা একত্রিত হয়ে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আদায়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল (রবিবার) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে একটি গণজমায়েতের মাধ্যমে তাদের এই আন্দোলনের সূত্রপাত হতে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ৪ দফা দাবি কী কী?
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মূলত পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির কিছু পরিবর্তনের জন্য চারটি প্রধান দাবি তুলে ধরেছে। চলুন, দাবিগুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. সাপ্লিমেন্টারি বা ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার সুযোগ
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি হলো, যারা এক বা দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের জন্য দ্রুত একটি সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে তাদের একটি পুরো বছর নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচবে এবং তারা একই শিক্ষাবর্ষের বন্ধুদের সাথে উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
২. খাতা পুনঃনিরীক্ষণ নয়, চাই পূর্ণাঙ্গ পুনর্মূল্যায়ন
এটি আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি। বর্তমানে বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ক্ষেত্রে শুধু প্রাপ্ত নম্বরগুলো যোগ করে দেখা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা চায়, তাদের খাতা যেন নতুন করে একজন নিরপেক্ষ পরীক্ষক দ্বারা সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা হয়। তাদের মতে, নম্বর গণনার পাশাপাশি খাতা মূল্যায়নেও ভুল থাকতে পারে। এমসিকিউ (MCQ), সৃজনশীল (SQ) ও ব্যবহারিক (Practical) পরীক্ষার নম্বরসহ সম্পূর্ণ খাতাটিই পুনর্মূল্যায়নের আওতায় আনার দাবি তাদের।
৩. প্রতিটি অংশের নম্বর আলাদাভাবে প্রদর্শন
শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফলে স্বচ্ছতা চায়। তাই তৃতীয় দাবিতে তারা বলছে, প্রতিটি বিষয়ে প্রাপ্ত মোট নম্বরের পাশাপাশি এমসিকিউ, সৃজনশীল ও ব্যবহারিক অংশে কে কত নম্বর পেয়েছে, তা আলাদাভাবে মার্কশিটে উল্লেখ করতে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবে ঠিক কোন অংশে তার ঘাটতি ছিল।
৪. এমসিকিউ ও সৃজনশীল অংশে সম্মিলিত পাস
অনেক শিক্ষার্থী এমসিকিউ বা সৃজনশীল কোনো একটি অংশে সামান্য নম্বরের জন্য অকৃতকার্য হয়। তাদের দাবি, এই দুটি অংশে আলাদা পাসের নিয়ম বাতিল করে, দুটির মোট নম্বরের ভিত্তিতে একটি ‘সম্মিলিত পাস’ (Combined Pass) পদ্ধতি চালু করা হোক। এটি চালু হলে অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে তারা মনে করে।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ
এবারের ফলাফলে কয়েকটি বোর্ডে পাসের হার গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের প্রধান কারণ। তারা মনে করছে, মূল্যায়ন পদ্ধতির কোনো ত্রুটির কারণেই হয়তো এমনটি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলো শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবিগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করে এবং এর সমাধানে কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।
শেষ কথা
শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে এসে কোনো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চিত না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আশা করা যায়, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবে এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও কার্যকর সমাধান বেরিয়ে আসবে, যা দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে সুরক্ষিত করবে।