বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: ‘পরিচয় সংকট থাকবে না, শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে গর্ববোধ করবে’ – উপাচার্য

দেশের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (National University)। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে প্রায়ই এক ধরনের ‘পরিচয় সংকটে’ ভুগতে দেখা যায়। তবে সেই দিন দ্রুতই শেষ হতে যাচ্ছে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আমূল পরিবর্তন ও মানোন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে, তার ফলে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে “গর্ববোধ করবে”

কেন এই দৃঢ় আশাবাদ? (পটভূমি)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই ‘পরিচয় সংকট’ বা ‘হীনমন্যতা’র পেছনে প্রধান কারণ ছিল দুটি:

১. ভয়াবহ সেশনজট: অতীতে একটি ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ করতে ৬ থেকে ৭ বছর সময় লেগে যেতো, যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নিতো। ২. শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন: দেশব্যাপী হাজার হাজার কলেজের শিক্ষার মানে সমতা না থাকা এবং আধুনিক কারিকুলামের অভাব।

এই দুটি কারণে চাকরির বাজারে প্রায়ই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়তে হতো বা অবমূল্যায়নের শিকার হতে হতো, যা তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি করেছিল।

সেশনজট এখন অতীত, ফোকাস এখন মানে

উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন যে, সেই অন্ধকার সময় পার হয়ে এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

১. সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত: তিনি জানান, প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন তাদের শিক্ষাবর্ষ নির্দিষ্ট সময়েই (৪ বছরে অনার্স, ১ বছরে মাস্টার্স) শেষ করতে পারছে। এটিই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি।

২. কারিকুলাম আধুনিকায়ন: শুধু সেশনজট নয়, শিক্ষার মান বাড়াতেও ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য বলেন, বিশ্ববাজার ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তুলতে কারিকুলাম (পাঠ্যসূচি) আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এতে আইসিটি, প্রফেশনাল কোর্স এবং সফট স্কিলস-এর মতো জরুরি বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা: হীনমন্যতা নয়, গর্ববোধ করুন

উপাচার্য মনে করেন, যখন একটি প্রতিষ্ঠান তার প্রধান সমস্যাগুলো (বিশেষ করে সেশনজট) সমাধান করে ফেলে এবং শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়ার জন্য努力 (চেষ্টা) করে, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আর ‘পরিচয় সংকটে’ ভোগার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

তিনি শিক্ষার্থীদের হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে নিজেদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে প্রমাণ করার আহ্বান জানান।

শেষ কথা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এই বক্তব্য লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। সেশনজট মুক্ত একটি আধুনিক ও মানসম্মত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যদি সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এটি শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, বরং সমগ্র দেশের জন্যই একটি বড় প্রাপ্তি হবে। এই প্রতিষ্ঠানটিও দেশের প্রথম সারির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই তার মর্যাদা ও গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *