বিশ্ববিদ্যালয়

সমাবেশ শেষ, তবু ঢাবি ক্যাম্পাস ছাড়ছে না হকার ও ভাসমানরা! নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

গত ২৩ অক্টোবরের রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তবে, সমাবেশ শেষ হওয়ার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়া অসংখ্য হকার (Hawker) এবং ভাসমান লোকজন (Floaters/Homeless) আর বের হচ্ছেন না। উল্টো তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক একাডেমিক পরিবেশ ব্যাহত করছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

কোথায় দেখা যাচ্ছে এই উপদ্রব?

ক্যাম্পাসের প্রায় সর্বত্রই এদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও কয়েকটি জায়গায় তাদের উপস্থিতি besonders (বিশেষভাবে) চোখে পড়ার মতো:

  • টিএসসি (শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্র) চত্বর: এটি শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র, কিন্তু এখন এখানে হকার ও ভাসমানদের ভিড় লেগেই থাকছে।
  • শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর: এই ঐতিহাসিক স্থানগুলোতেও তাদের অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে।
  • কার্জন হল এলাকা: বিজ্ঞান অনুষদের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়ও তাদের উপস্থিতি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে।
  • ক্যাম্পাস শ্যাডো, বিভিন্ন অনুষদ ভবন ও আবাসিক হল: এসব জায়গাতেও তারা আশ্রয় নিয়েছে, এমনকি রাতের বেলায়ও থাকছে।

কেন এটি একটি বড় সমস্যা?

এই হকার ও ভাসমান লোকজনের নিয়ন্ত্রণহীন উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একাধিক সমস্যা তৈরি করছে:

  1. শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত: তাদের হৈ-হট্টগোল, যেখানে-সেখানে অবস্থান ক্লাস ও পড়াশোনার মনোনিবেশে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
  2. নিরাপত্তা ঝুঁকি: শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এদের মধ্যে অনেকেই চুরি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। ফলে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ছাত্রীরা, ক্যাম্পাসে চলাচল করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
  3. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: অনেকেই ক্যাম্পাসের ভেতরেই মলমূত্র ত্যাগ সহ নানা অস্বাস্থ্যকর কার্যকলাপ করছে, যা পরিবেশ দূষিত করছে এবং দৃষ্টিকটু পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করছে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে। তারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, জানা গেছে, এদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং তারা বারবার ফিরে আসায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে।

প্রক্টরিয়াল টিম জানিয়েছে, তারা এই সমস্যা সমাধানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে এবং দ্রুতই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ও দাবি

সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই পরিস্থিতিতে চরম বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাদের দাবি, অবিলম্বে ক্যাম্পাসকে বহিরাগত ও ভাসমানদের উপদ্রব থেকে মুক্ত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

শেষ কথা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি দেশের মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এর পরিবেশ ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। আশা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুততম সময়ে এই সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাভাবিক ক্যাম্পাস ফিরিয়ে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *